
আজ খবর (বাংলা), [রাজ্য] কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ,০৬/২০২৫ : আজ রাজ্যের সর্বত্র সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে রামনবমী. রাজ্যের সব জায়গাতেই বেরিয়েছে শোভাযাত্রা। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন এই শোভাযাত্রাগুলিতে।
হিন্দু শাস্ত্র মতে পুরুষোত্তম রাম হচ্ছেন হিন্দুদের দেবতা। বিগত ৪০০ বছর আগে থেকে হাওড়ার রামরাজাতলাতে পূজিত হয়ে আসছেন শ্রী শ্রী রাম, সঙ্গে পুজিতে হন মাতা সীতা দেবী, অনুজ লক্ষণ এবং রামের পরম ভক্ত বজরংবলী। দীর্ঘ এই বছরগুলি ধরে প্রথা মেনে সাড়ম্বরে পুজিত হয়ে আসছেন শ্রীরামচন্দ্র। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রামরাজাতলা রামমন্দিরে কয়েক লক্ষদিক মানুষ ভীড় করেন দূর- দূরান্ত থেকে। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রামরাজাতলার এই মন্দির চত্বর জুড়ে বসে হরেক রকম দোকানপাট। তৈরি হয় একটি মেলার পরিবেশ।
আজ থেকে এই মেলা চলবে প্রায় তিন মাস। এই তিন মাস হাওড়া সিটি পুলিশের নজরদারি থাকবে এই অঞ্চলগুলিতে। মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা অঞ্চল সিসিটিভি ক্যামেরায়, যাতে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে শ্রী রাম পুজো উপলক্ষে। মেলা চত্বর বা মন্দির চত্বরের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে থাকেন হাওড়া সিটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সাধারণ পুলিশের কর্মীরা। এই মেলা উপলক্ষে প্রতি বছর অগণিত মহিলা ভক্তরা আসেন রামকে দর্শন করতে, কিন্তু তাদের শৌচালয় অথবা বায়ো টয়লেটের কোন কিছুর ব্যবস্থা করা হয় না প্রশাসনের তরফ থেকে। এই বিষয় নিয়ে মহিলা ভক্তদের মধ্যে হয়, যে তারা এত দূর-দুরান্ত থেকে আসেন অথচ ভোর তিনটে থেকে পূজো শুরু হয় সারাদিন চলে পূজা অর্চনা। কিন্তু এই সমস্যার সম্মুখীন হতেই হয় মহিলা ভক্তদের। তাই তাঁরা হাওড়ার প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছেন যেন তাদের দিকে তাকিয়ে অন্তত কয়েকটি বায়ো টয়লেট এবং শৌচাগার তৈরি করা হয় আগামী বছরে।

রামনবমী উপলক্ষে পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতে বেরুগ্রামে রামনবমী কমিটির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। এখানে বেরুগ্রাম রামনবমী বজরংবলি কমিটির পক্ষ থেকে কাজল শেখকে জয় শ্রীরাম লেখা পতাকা সহ ত্রিশূল উপহার দেওয়া হল। অন্যদিকে অনুষ্ঠান চলাকালীন খাবার পরিবেশনও করেন তিনি। এদিন কাজল শেখ ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নানুরের বিধায়ক বিধান মাঝি।
হাইকোর্টের অনুমতিক্রমে শিবপুরের কাজীপাড়া অবনি মল সংলগ্ন নরসিংহ মন্দির থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত অঞ্জনি পুত্র সেনার রামনবমী শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় শোভাযাত্রা বের হয়েছে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী থেকে শুরু করে উপস্থিত রয়েছেন অলোক রাজোরিয়া, অখিলেশ চতুর্বেদী সহ পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা। অঞ্জনি পুত্র সেনার রামনবমীর শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মিছিল কাজীপাড়ার মোড় থেকে শুরু হয়ে অলোকা মোড়, পিএম বস্তি, ট্রাম ডিপো, শিবপুর থানা, সন্ধ্যাবাজার হয়ে হাওড়া ময়দানে এসে শেষ হবে।

বীরভূমের সিউড়ীতে রামনবমীর মিছিলে খেলনা বন্দুক , এয়ারগান , কোথাও প্লাস্টিকের বন্দুক নিয়ে মিছিল। তরোয়াল নিয়েও মিছিল। সিউড়ী থানার পুলিশ মিছিলের মধ্যে ঢুকে বাজেয়াপ্ত করে সেই সব তরোয়াল , খেলনা বন্দুক। হিন্দু-হিন্দু ভাই স্লোগান নয়। রাম নবমীর শোভাযাত্রায় উঠল হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই স্লোগান। হ্যাঁ রবিবার রাম নবমী উপলক্ষে রাম ভক্তদের আয়োজিত শোভাযাত্রায় রবিবার এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির ধরা পড়ল মালদা শহরের বুকে। শোভাযাত্রায় সামিল বিজেপির উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মুকে জড়িয়ে ধরে হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই স্লোগান দিলেন, মালদা শহরের মুসলিম কমিটি আটকোশী আঞ্জুমান আকবারিয়া ইসলামিয়ার সদস্যরা। তবে শুধু স্লোগান নয়। তারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী রাম ভক্তদের উপর পুষ্প বৃষ্টি করে, জল ও লাভডু বিতরণের মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা দেন।
রাম নবমী কে ঘিরে উৎসবের আমেজ তিস্তা পাড়ের পুরাতন দোমোহনিতে, রবিবার রাম সেনার পক্ষ থেকে কচিকাঁচা সহ গ্রামের নবীন প্রবীণদের নিয়ে এই উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা গ্রামের পথ পরিক্রমা করে দো মো হিনী কালী বাড়ীতে সমাপ্ত হয়। এই প্রসঙ্গে রাম সেনার অন্যতম উদ্যোক্তা সৌরভ হাজরা বলেন, রাম নবমী পালনের সঙ্গে গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচী রয়েছে আমাদের, আজকের এই রাম নবমী মিছিলের আয়োজন করার মূল লক্ষ্য আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের সৃষ্টি ,সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া। শিলিগুড়ির মহাবীরস্থানে সত্যনারায়ণ মন্দিরে রামের পূজো দিয়ে আজকের দিন শুরু করেন মেয়র গৌতম দেব।
জলপাইগুড়ি পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর পৌশালী দাসের নেতৃত্বে শুরু হলো রামনবমীর মহা মিছিল। এই মিছিল ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরেশ নগর কলোনি থেকে এই মিছিল বের হয়,। সম্পূর্ণ ২৫ নম্বর ওয়ার্ড পরিক্রমা করে আবার এই পরেশ নগর কলনিতে শেষ হবে বলে জানান ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৌশালী দাস। শ্রী রামনামিনী উদযাপন ধূপগুড়িতে শহরে বিশালাকার র্যালি বের হয়ে গোটা শহর পরিক্রমা করে। হাজার হাজার মানুষের সমাগম লক্ষ করা গেল। জানা গেছে এদিন জেলায় মোট ১৮ টি জায়গায় প্রায় দেড় লক্ষ উপর ভক্ত সমাগম হয় খুশি উদ্যোক্তারা। শ্রী রামনামিনী উদযাপন সমিতি জলপাইগুড়ির তরফে জোর প্রস্তুতি শহরে মিলন। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, চলছে রামের পুজো। দুপুরে সুবিশাল মিছিল শহরে পরিক্রমা করবে। জেলায় মোট 18 টি জায়গায় প্রায় দেড় লক্ষ উপর ভক্ত সমাগম হবে বলে আশা করছে উদ্যোক্তারা।
এদিন রাজ্য জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য পুলিশ। সর্বত্র ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের সব কর্মচারীকে ছুটি বাতিল করে রাস্তায় নামানো হয়েছিল। সর্বত্র কড়া পুলিশি নজরদারি ছিল. মানুষ আনন্দের সাথে রামনবমী পালন করতে পেরেছে। যেখানে প্রয়োজন পুলিশ সেখানে কঠোর মনোভাব নিয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ছিল, না সেখানে নরম মনোভাব নিয়েছে। মোটামুটি যেখানে বলা হয়েছিল রামনবমী উপলক্ষে অশান্তির সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে শান্তিপূর্ণভাবেই মিটেছে রামনবমী পূজা। সাধারণ মানুষ ফুল মার্ক্স্ দিয়েছে পুলিশকে।