একবিংশ শতাব্দীতেও বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়ে মৃত্যু আদিবাসী নাবালিকার, তুষের আগুনের মতো ক্ষোভ বাড়ছে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায়।

আজ খবর ( বাংলা), [রাজ্য] ক্রান্তি, জলপাইগুড়ি, ২৪/০৬/২০২৫ : নিজস্ব প্রতিনিধি: তরাই আদিবাসী সম্প্রদায়এবং ক্রান্তি ব্লকের বিভিন্ন চা বাগানের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের ডাকে একটি শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি ব্লকের ক্রান্তি বাজার থেকে ক্রান্তি পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত। উক্ত পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করে তরাই ডুয়ার্সের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংগঠন গুলো।
উল্লেখ্য , গত ১৮ই জুন রাজা ডাঙ্গা পি এম হাই স্কুলের ছাত্রী রিমিকা মুন্ডার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয় যে ছাত্রীটিকে তার উচু ক্লাসের কিছু দিদি বারবার উত্যক্ত করত গায়ের কালো রং নিয়ে।
বিষয়টি বাড়িতে মা-বাবাকে জানায় সে, তবে সেই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে কোন প্রকার অভিযোগ জানানোর আগেই চরম পরিণতি ঘটে যায় আদিবাসী এই নাবালিকার । এর পরেই প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন এলাকাবাসী সহ মৃত ছাত্রীর পরিবার। ইতিমধ্যে তাঁদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ ক্রান্তি পুলিশ ফাঁড়ি এবং বিডিও অফিস সহ স্কুল কর্তৃপক্ষকের কাছে জমা পরেছে । রিমিকা মুন্ডার মৃত্যুর ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে সোমবার একটি পদযাত্রার মধ্য দিয়ে নিজেদের ক্ষোভ উগরে ক্রান্তি থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন কয়েকশো জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষ।
এই প্রসঙ্গে বিনীতা কুজুর টেটে জানান আমরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোক দেখতে গায়ের রং কালো তাই বলে আমাদের স্কুল কলেজ অফিসে গায়ের রং নিয়ে কেউ কটুক্তি করবে আমরা সেটি কোনভাবে বরদাস্ত করব না। আমরা আজকে লিখিতভাবে ক্রান্তি থানায় রিমিকা মুন্ডার ন্যায়ের দাবিতে থানায় জানালাম। যদি প্রশাসন অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বের না করে এবং আইনী ভাবে সাজা দেওয়া না হয় আগামী দিনে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
এছাড়াও এদিনের এই পদযাত্রায় বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও অংশগ্রহণ করেছে এবং প্রত্যেকের হাতে ছিল “উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর রিমিকা মুন্ডা”।
এছাড়াও অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সম্পাদক বাবলু মাঝি জানান “এর আগেও রাজাডাঙ্গা পিএম বিদ্যালয়ে এরকমের কটুক্তি করার ঘটনা ঘটেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই আমরা প্রশাসনকে জানাতে চাই অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিতকরণ করে আইনীভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক এবং আগামী দিনে যাতে আবার এ ধরনের দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক ঘটনা না ঘটে আমরা তাই আজ তরাই ডুয়ার্সের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়ে ক্রান্তি থানায় পদযাত্রার মধ্য দিয়ে একটি স্মারকলিপি তুলে দিলাম।” পুলিশ প্রশাসন এদিন ক্রান্তি থানার সামনে ব্যারিকেড তৈরি করে আটকে দেয় পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের, পরবর্তীতে একটি প্রতিনিধি দল ক্রান্তি পুলিশ ফাঁড়িতে দাবি সম্মিলিত স্মারকলিপি জমা করে।
এছাড়াও মাল বাজার থানাতেও একই দাবীতে জমা করা হয় স্মারক লিপি। গায়ের রং নিয়ে কটুক্তির মতো ঘটনায় ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলার বিভিন্ন মহলে , মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী থেকে সমাজ বিশ্লেষকদের মতে একবিংশ শতাব্দীতে এমন ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না।