অনেকেই সরকারি হাসপাতালের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না, কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে বনগাঁ এবং মালদহ সরকারি হাসপাতালে দুটি জটিল অপারেশনে সাফল্য দেখা গেল।

আজ খবর (বাংলা), [রাজ্য], মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, ০৬/০৭/২০২৫ : শিরদাঁড়ার ভিতরে থাকা টিউমারের সফল অস্ত্রোপচার করা হল মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এই প্রথম মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতে শিরদাঁড়ার ভেতরের টিউমারের অস্ত্রোপচার সফল ভাবে করলেন চিকিৎসকেরা।এমন ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার করে নজির গড়লেন নিউরো সার্জেন চিকিৎসক উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস। সফল অস্ত্রোপচারের পর রোগী চিকিৎসকের নজরদারিতে রয়েছে। বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন রোগী। শনিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘির আধুয়া গ্রামের বাসিন্দা রিজিয়া বিবি(৩৮)। স্বামী নূরে আলম পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। স্বামীর সঙ্গে রিজিয়া বিবিও ভিন রাজ্যে কাজ করতেন। বর্তমানে তাঁদের পাঁচ সন্তান। গত পাঁচ বছর ধরে রিজিয়া বিবি কোমর ব্যাথা সহ,পায়ে ব্যাথা ও পায়ে ঝিনঝিন ধরত। প্রথম দিকে গুরুত্ব না দিলেও ব্যথা বাড়তে থাকলে চিকিৎসা করান । কিন্তু গত একবছর আগে দিল্লিতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানে এইমস হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। সেখানেই রোগ ধড়া পড়ে।
সেখানে চিকিৎসকেরা জানান শিরদাঁড়ার ভেতরের স্পাইনাল কডের ভিতরে টিউমার হয়েছে। অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু সেখানে তারিখ পরিবর্তন হতে থাকে। অস্ত্রোপচার হচ্ছিল না। স্বামী নূরে আলম স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে চলে আসেন। কারণ দিল্লিতে থাকতে খরচ অনেক। বাড়িতে স্ত্রীর সমস্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। অবশেষে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। সেখানে নিউরো বিভাগের চিকিৎসক উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস অস্ত্রোপচার করার কথা বলেন।
এর আগে নূরে আলম বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে অস্ত্রোপচারের জন্য আট লক্ষ টাকা চেয়েছিল। টাকা না থাকায় সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার মালদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করায় স্ত্রীকে। শুক্রবার সফল অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক। শিরদাঁড়ার স্পাইনাল কর্ডের ভিতরে টিউমারটি ক্রমশ বড় হতে থাকায় হাঁটা চলা করতে পারছিলেন না রিজিয়া বিবি।
মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরণের রোগী খুব কম দেখা যায়। নিউরো বিভাগের চিকিৎসক সার্জেন উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস বলেন, এই রোগ নির্ণয় প্রথম দিকে সম্ভব নয়। রোগীর পায়ে ব্যাথা, ঝিমুনি হবে। ধীরে ধীরে হাঁটা চলা বন্ধ হয়ে পড়বে। এমনকি অস্ত্রোপচার না করলে প্রস্রাব, পায়খানা সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এইক্ষেত্রে রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। ধীরে ধীরে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন।
মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে এই চিকিৎসা হয়েছে। তিনজন চিকিৎসক প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচার করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁতে সরকারি হাসপাতালে আর একটি জটিল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মানুষের ভরসা বাড়ছে সরকারি হাসপাতালের ওপর।