
আজ খবর (বাংলা), [দেশ], নতুন দিল্লী, ভারত, ২২/০৪/২০২৫ : কলকাতার জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জেডএসআই)-এর কলকাতার গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে চারটি নতুন প্রজাতির মাকড়সার সন্ধান পেয়েছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মধ্যে দুটি প্রজাতি রয়েছে যা অতীতে বিজ্ঞানীদের কাছে অজানাই ছিল এবং আরও দুটি প্রজাতির উপস্থিতি এই দেশে প্রথমবারের মতো নথিবদ্ধ হয়েছে। এই আবিষ্কারগুলি এই অঞ্চলের অনেকাংশে অনাবিষ্কৃত অ্যারাকনিড জীববৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছে এবং এর ফলে, বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য হটস্পট হিসাবে স্বীকৃত এই অঞ্চলটির চলমান জীববৈচিত্র্য যে যথেষ্ট গবেষণার অবকাশ রাখে সেটি নির্দিষ্ট করে।
নতুন সন্ধান পাওয়া প্রজাতি Psechrus chizami, নাগাল্যান্ডে পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি, Psechrus nathanael নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয় উভয় রাজ্য থেকেই পাওয়া গিয়েছে। chizami নামকরণের উৎপত্তি স্থল হল চিজামি, যেখান থেকে এটি প্রথম সংগ্রহ করা হয়। Psechrus nathanael-এর নামকরণ করা হয়েছে শ্রী নাথানেইল পি. এ. নিউমাই-এর সম্মানে, যিনি অনুসন্ধান পর্বে অমূল্য সহায়তা দান করেছিলেন। মাকড়সার এই সংযোজনগুলির সঙ্গে, ভারতে আবিষ্কৃত Psechrus প্রজাতির মাকড়সার মোট সংখ্যা হল সাতটি।
Psechridae গোত্রের মাকড়সাগুলি স্বতন্ত্র- সামান্য গম্বুজ-আকৃতির জাল তৈরি করে যার মধ্যে একটি নল-সদৃশ আশ্রয়স্থল থাকে, যা সাধারণত ছোট ফাটল, পাথরের ফাঁক বা গাছের শিকড়ের মধ্যেই থাকে। নতুন Psechrid প্রজাতিগুলি তাদের অনন্য জননাঙ্গের কারণে অন্যান্য প্রজাতিগুলি থেকে ভিন্ন।
এই নতুন আবিষ্কারটি ZOOTAXA জার্নালের সাম্প্রতিক সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাদলটিতে ছিলেন ডক্টর সৌভিক সেন, ডক্টর সুধীন পি পি এবং ডক্টর সৌভিক মালি। এই গবেষক দলটি এছাড়াও Pardosa tuberosa এবং Thiania abdominalis নামের আরো দুটি প্রজাতি মাকড়শার উপস্থিতি মেঘালয়াতে নথিবদ্ধ করেছেন। এই প্রজাতির ভারতে উপস্থিতি RECORDS OF THE ZOOLOGICAL SURVEY OF INDIA গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নেকড়ে মাকড়সা Pardosa tuberosa জীব বৈচিত্রের পরিবর্তনশীলতাকে চিহ্নিত করে, এর ক্রমহ্রাসমান সংখ্যা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে না চলতে পারাকে যথেষ্ট ইঙ্গিত করে।
Thiania abdominalis কে জাম্পিং স্পাইডার বলা হয়ে থাকে এর লাফ দেওয়ার ক্ষমতার জন্য। মাঝারি আকৃতির এই প্রজাতির মাকড়সার হালকা লাল খয়েরী দেহ, ক্রিম হলুদ পেট ও কালো পা। এই রঙ-এর সাহায্যে নিজেদের স্বতন্ত্রতা প্রমাণ করে। এরা যেজাল তৈরি করে তাতে শিকার ধরে না, বরং নিপুণ দক্ষতায় খাদ্য সংগ্রহ করে।
এই গবেষণার প্রধান অন্বেষী ডঃ সৌভিক সেন বলেছেন, “এই আবিষ্কারটি কেবল দুটি নতুন প্রজাতি এবং দুটি নতুন জাতীয় রেকর্ড কেবল নয়, এটি এই বাস্তুতন্ত্রে অনন্ত জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার সম্ভাবনাকেও নির্দিষ্ট করে। এদের বিভিন্ন আবাসস্থলের অনুসন্ধানের ফলে সম্ভবত আরও অসংখ্য প্রজাতি আবিষ্কৃত হবে যা এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা।”
জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধিকর্তা ডঃ ধৃতি ব্যানার্জী এই আবিষ্কারের বিষয়ে রলেন, “এই আবিষ্কার একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ, পরবর্তীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে আরও ব্যাপক সমীক্ষা চালানো হবে, কারণ এখানকার জীববৈচিত্র্য অতুলনীয়। এই অঞ্চলের জীবজগতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আর-ও অনুসন্ধান প্রয়োজন, গবেষকরা উত্তর-পূর্ব ভারতের বনভূমি ও পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা অনন্ত জীববৈচিত্র্যের রহস্য উন্মোচনের আশা রাখেন।”