বিশাল স্কুল ভবনটিকে যেন রাতের বেলায় হানাবাড়ি বলে ভুল হয়

আজ খবর (বাংলা), [রাজ্য], ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ৩০/০৬/২০২৫ : ফাঁকা মাঠের মধ্যে স্কুল ভবন একটা রয়েছে বটে, তবে সেই স্কুলে না আছে তেমন পড়ুয়াদের ভীড়, না আছে একাধিক শিক্ষক। এভাবেই চলছে আস্ত একটা জুনিয়ার হাই স্কুল।
এই স্কুলটির অবস্থান জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে, নাম নিরঞ্জন পাঠ জুনিয়ার হাই স্কুল। এই স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা মাত্র ১৪ এবং শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১ জন. তাঁর নাম নিরঞ্জন রায়. তিনি একাধারে শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, সাফাই কর্মী, এবং আরও অনেক কিছু। স্কুলটিতে রয়েছে শ্রেণী কক্ষ, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড, আলো, পাখা সব কিছুই। শুধুমাত্র নেই পড়ুয়া আর শিক্ষক। পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচাগার এমনকি স্কুল সংলগ্ন খেলার মাঠ আছে, অথচ খাতায় কলমে ১৪ জন থাকলেও সারাদিনে ক্লাস করতে আসে তিন চারটি পড়ুয়া।
জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের গোসাইহাট লেবুতলা এলাকায় ২০১১ সালে স্থাপিত হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়াদের জন্য নিরঞ্জন পাঠ জুনিয়র হাই স্কুল। যা বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। অবাক করা বিষয় এই এত বড় স্কুলের দায়িত্বে রয়েছে মাত্র একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। যিনি একা হাতে কখনো স্কুলের সাফাই কর্মী, কখনো লাইবেরিয়ান, কখনো দপ্তরি তো কখনো আবার পড়ুয়াদের জন্য হয়ে উঠছে শিক্ষাগুরু। তার ওপর বাড়তি স্কুলের কাগজে-কলমের একাধিক কাজ এই গেস্ট টিচারকেই সামলাতে হয়।। পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত মাত্র ১৪ জন ছাত্রর হিসেবটা সরকারি খাতায় থাকলেও উপস্থিতির হার মাত্র হাতে গোনা তিন থেকে পাঁচজন। এভাবেই একটি জুনিয়র হাইস্কুল চলছে। কোন হেলদোল নেই স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্লক প্রশাসন এমনকি শিক্ষা বোর্ডের। এই অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। গ্রামবাসী অভিভাবকদের দাবি স্কুলের শিক্ষক না থাকায় পড়ুয়া সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। হয়তো একটা সময় গিয়ে স্কুলটাই বন্ধ হয়ে যাবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অবশ্য জানিয়েছেন গোটা বিষয়টি সকলে জানা থাকলেও সরকার কোন ভ্রুক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমানে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে গোটা স্কুলটি। তিনিও আগামী বৎসর অবসর নেবেন। তার আগে স্কুলের হাল ফেরাতে শিক্ষক নিয়োগ করবে কি না , তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা! পড়ুয়ারাও চাইছে স্কুলে আরো শিক্ষক নিয়োগ হোক নয়তো স্কুলটাই বন্ধ হবে, পড়াশোনায় একেবারে লাটে উঠে গেছে। স্কুলের এই বর্তমান পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় মানুষ তাদের বাচ্চাদের পার্শ্ববর্তী উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিতে পড়ুয়া ভর্তি করাচ্ছেন। এদিকে সু বিশাল এই স্কুলটি সকলের অজান্তেই বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি সহ শিক্ষার যে অবস্থা সে জায়গায় দাঁড়িয়ে একটি সরকারি জুনিয়র হাই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া কার্যত সমাজের ক্ষতি।