
আজ খবর (বাংলা), [রাজ্য], সাগরদ্বীপ,দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ০৮/০৬/২০২৫ : স্থায়ী কৃষি ও গ্রামীণ ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, আইসিএআর– সিআইএফআরআই সাগর–কৃষ্ণনগর স্বামী বিবেকানন্দ যুব সাংস্কৃতিক সমাজ এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (কেভিকে), নিমপীঠের যৌথ উদ্যোগে, পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপে শনিবার (৭ জুন, ২০২৫) তারিখে বিকসিত কৃষি সংকল্প অভিযান (ভিকেএসএ–২০২৫)-এর অধীন একাধিক প্রভাবশালী সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এই উদ্যোগের আওতায় ২৩টি গ্রামে বিস্তৃত চারটি মূল আলোচনামৃলক অনুষ্ঠান—রুদ্রনগর, কৃষ্ণনগর, কমলপুর ও গোবিন্দপুরে—আয়োজিত হয়, যেখানে ৩০০০-রও অধিক কৃষক ও মৎস্যজীবী অংশগ্রহণ করেন। ভিকেএসএ–২০২৫-এর অন্তর্গত এই প্রচারাভিযানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বৈজ্ঞানিক সচেতনতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতির প্রসার এবং ভারতবর্ষের অন্যতম সংবেদনশীল উপকূল অঞ্চল—সুন্দরবনের—গ্রামীণ জীবনযাত্রাকে অধিক স্থায়ী করে তোলা।
এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন আইসিএআর-এর উপ-মহাপরিচালক (মৎস্যবিজ্ঞান) ড. জে. কে. জেনা এবং আইসিএআর–সিআইএফআরআই-এর পরিচালক ড. বি. কে. দাস। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন একাধিক প্রবীণ বিজ্ঞানী, যাঁরা বস্তুনিষ্ঠ বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে অংশ নেন। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, জলের মানোন্নয়ন, খাদ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের মোকাবিলা।
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় জলবায়ু সহনশীল মৎস্য ও কৃষি পদ্ধতির উপর, যা সুন্দরবন অঞ্চলের ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিজ্ঞানীরা অভিযোজনভিত্তিক অন্তর্জলীয় মৎস্যচর্চা, ঋতুভিত্তিক পরিকল্পনা এবং সুসংহত সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো উদ্ভাবনী কৌশল ব্যাখ্যা করেন, যা স্থানীয় জনসমাজকে পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলার উপযোগী করে তুলতে সহায়ক।
ড. জেনা বলেন, “আমরা এখানে শুধুমাত্র জ্ঞান বিতরণের জন্য আসিনি, বরং মৎস্যজীবীদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার উদ্দেশ্যেই এসেছি। তাঁদের বাস্তবজ্ঞান ভবিষ্যতের জন্য স্থানীয় অনুযোগ-উপযোগী উদ্ভাবনের মূল ভিত্তি।”

এই আলোচনামূলক অধিবেশনগুলি মৎস্যজীবীদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়, যেখানে তাঁরা তাঁদের স্থানীয় জ্ঞান ও বাস্তবতাকে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হন। এতে উভয়পক্ষে বিশ্বাস ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীকালে যৌথ সমস্যা-সমাধানের দিকনির্দেশ তৈরি করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী বঙ্কিম চন্দ্র হাজরা। তাঁর উপস্থিতি রাজ্য সরকারের উপকূলবর্তী অঞ্চলের স্থায়ী উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত করে।
সচেতনতামূলক প্রচারের অংশ হিসেবে, কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয় বৈজ্ঞানিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পুস্তিকা, প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা (পিএমএমএসওয়াই) সংক্রান্ত লিফলেট, এবং প্রাক-খরিফ চাষের পরামর্শপত্র। এই তথ্য উপকরণগুলি তাঁদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারেও মনযোগ আকর্ষণ করে।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে সকল অংশগ্রহণকারী কৃষক ও মৎস্যজীবী পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও মৎস্যচর্চা গ্রহণের শপথ গ্রহণ করেন—যা দেশের প্রাকৃতিক ভবিষ্যৎ এবং জীবিকাসুরক্ষার প্রতি সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতীক।
এই কর্মসূচি, কুলতলি ও জয়গোপালপুর (বাসন্তী)-এ এর পূর্ববর্তী কার্যক্রমসহ, আইসিএআর–সিআইএফআরআই-এর বহুমাত্রিক রণনীতি স্পষ্ট করে তোলে—যার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক দক্ষতা এবং সমাজমুখী অংশগ্রহণকে একত্রিত করে আত্মনির্ভর, জলবায়ু-সচেতন কৃষি সম্প্রদায় গঠনের উদ্দেশ্য সাধন করা হচ্ছে।
![]()