অস্ত্র কারখানার হদিশ  !  তবে দেবী দুর্গার অস্ত্র কারখানা 

দেবী দুর্গার অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিশ মিলেছে হাওড়ায় 

আজ খবর (বাংলা), [রাজ্য], শ্যামপুর , হাওড়া, ১৩/০৯/২০২৫ : হাওড়া শ্যামপুর থানার ধান্ধালী অঞ্চলে বাড়ির ভেতরই চলছে এক বিশেষ কর্মযজ্ঞ। চারদিকে টিনের সিট, হাতুড়ি, ছেনি—তার শব্দে মুখর ঘর। বাইরে থেকে মনে হতে পারে অস্ত্র কারখানা, কিন্তু আসলে এগুলো দেবী দুর্গার পুজোর অপরিহার্য অলঙ্কার—অস্ত্র।

দশভুজা মা দুর্গা, মহিষাসুর বধের রূপ, দেবীর হাতে ত্রিশূল, খড়গ, ধনুক, তীর না থাকলে কি পূর্ণ হয় দেবীর আবির্ভাব? তাই প্রতিটি পূজার মণ্ডপেই এই অস্ত্রের বিশেষ চাহিদা। আর সেই অস্ত্র গড়ে তুলছেন সুদীপ অধিকারী এবং তাঁর সহকর্মীরা।

সুদীপ জানান, “প্রথমে একাই শুরু করেছিলাম। এখন ৯ জন কারিগর নিয়ে কাজ করি। বছরভর অর্ডার থাকে, তবে পূজোর দু’মাস আগে চাপ এতটাই বাড়ে যে রাত জেগে কাজ করতে হয়।”

প্রায় ১২ বছরের বেশি সময় ধরে এই পেশায় রয়েছেন তিনি। টিনের পাত থেকে তৈরি হয় ত্রিশূল, খড়গ, ধনুক, গদা—প্রতিমার প্রয়োজনীয় প্রতিটি অস্ত্র। শুধু দুর্গাই নয়, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এমনকি মহিষাসুরের হাতেও অস্ত্র বানিয়ে দেন তারা।

এই অস্ত্র যায় হাওড়া ছাড়িয়ে কলকাতা ও রাজ্যের নানা জায়গায়। জগদ্ধাত্রী পূজা পর্যন্ত টানা কাজ চলে। তারপর মাত্র ১৫ দিনের ছুটি মেলে কারিগরদের।

তবে সুদীপের মনে শঙ্কাও আছে। তিনি বলেন, “এখন থিমের পূজার প্রচলন বেড়েছে। অনেকে দেবীর হাতে অস্ত্র না দিয়ে অন্য প্রতীক বসাচ্ছেন। আগামী দিনে যদি এই ধারা বাড়ে, তাহলে আমাদের কাজ কমে যাবে।”

অন্যদিকে এই কাজের মধ্যে দিয়ে গ্রামাঞ্চলের কিছু মহিলাকেও তিনি যুক্ত করেছেন, যাতে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

ধান্ধালীর সেই ছোট্ট বাড়ি থেকেই সুদীপ অধিকারীর গড়া অস্ত্র পৌঁছে যায় রাজ্যের নানা পূজায়। হয়তো আলো-ঝলমলে মণ্ডপে দর্শনার্থীরা অস্ত্রের দিকে আলাদা করে তাকান না, তবু দেবী দুর্গার প্রতিটি হাতের শৌর্য আর শক্তির রূপক হয়ে ওঠে এই নিখুঁত টিনের কাজ। আর তার আড়ালে থেকে যায় ধান্ধালীর এক সাধারণ কারিগরের দিনের পর দিন ঘাম ঝরানো পরিশ্রম।


Loading

Leave a Comment