অভয়া কাণ্ডের প্রতিবাদে নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জকে ঘিরে ধুন্ধুমার 

অভয়ার বাবা ও  মায়ের ডাকেই সংঘটিত হয়েছিল নবান্ন অভিযান, সেই অভিযানে গিয়ে আহত হয়েছেন দেড়শো বিজেপি কর্মী

আজ খবর (বাংলা), [রাজনীতি], কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ০৯/০৮/২০২৫ :  এক বছর আগে প্রাণ হারানো  অভয়া যাতে সঠিক বিচার পান, তার দাবীতে নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জ।  রীতি মত রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি কলকাতার রাজপথ। 

শনিবার অভয়ার বিচার পাওয়ার দাবীতে প্রতিবাদ করতে হাজার হাজার মানুষ পথে নেমেছিলেন। আজ ছিল নবান্ন অভিযান। এই মিছিলে ছিলেন আর জি কর হাসপাতালে নির্যাতিতা ও খুন হয়ে যাওয়া চিকিৎসক পড়ুয়া অভয়ার বাবা মায়ের। বিজেপি এই নবান্ন অভিযানকে সমর্থন করেছিলেন। এদিন বিজেপি কর্মী এবং বহু সাধারণ মানুষ নবান্ন অভিযানে  অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

পুলিশ এই নবান্ন অভিযানের অনুমতি দেয় নি, যে কারণে নবান্নকে রীতিমত দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হয়েছিল। নবান্নে পৌঁছনোর সব রাস্তাই  ব্যারিকেড করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পার্ক স্ট্রিটের দিক থেকে মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। এই সময় শুভেন্দুর নেতৃত্বে পার্ক স্ট্রিতেই বসে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। 

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন যে “তাঁর গায়ে পুলিশ ধাক্কা দিয়েছিল।” এক সময় পুলিশের সাথে অভিযানকারীদের ধস্তাধস্তিও হয়। শুভেন্দুর দাবী, “পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, এতে বিজেপি কর্মীদের মাথা ফেটে গিয়েছে, কারোর হাত ভেঙে গিয়েছে। পুলিশের আক্রমণে শতাধিক আন্দোলনকারী মার্ খেয়ে আহত হয়েছেন।” অভয়ার বাবা মাকেও মারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভয়ার মা হাতে চোট  পেয়েছেন।  তাঁর হাতের শাঁখা  ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একসময় অভয়া মা বলে ওঠেন, “আমার মেয়েকে পুলিশ মেরেছে, আজ আমাকেও মারল। আমাকে আজ যতই মারুক, আমরা নবান্ন যাবই , আমরা বিচার ছিনিয়ে আনব।” এর প্রতিবাদে পার্ক স্ট্রিতেই বসে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। মিছিলের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দিতে থাকেন অগ্নিমিত্রা পল, কৌস্তভ বাগচী, অর্জুন সিং, শঙ্কর ঘোষরা। আন্দোলনে ছিলেন অন্যান্য বিজেপি বিধায়করা। অর্জুন সিং এর মাথা ফেটেছে  বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী।  

হাওড়ার দিক হেকে যে মিছিল নবান্ন অভিমুখে আসছিল, সেখানে ১০ ফুট উঁচু ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছিল।  আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেডের ওপর উঠে পড়লে সেখানেও লাঠিচার্জ করে পুলিশ।  সেই মিছিল আটকে পরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। আওয়াজ ওঠে “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। বিজেপির বক্তব্য আদালতের অনুমতি এবং শর্তসাপেক্ষ নির্দেশ নিয়েই বিজেপি কর্মীরা আজ আন্দোলন করছিলেন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে, কিন্তু পুলিশ অকারণেই মিছিল আটকাতে আসে। যার ফলে এই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।  

বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।  শুভেন্দু অধিকারী পার্ক স্ট্রিট ক্রসিঙে বসে থেকেই বলেন। “মিছিল এগোতে না দিলে আমরা এখানেই বসে থাকব।” পার্ক স্ট্রিটের মুখে ফের নতুন করে ব্যারিকেড দেওয়ার কাজ শুরু হয়. ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দার পাঞ্জাবি রক্তে ভেসে গিয়েছে। আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের রাণীমা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ পুলিশের আক্রমণে ভুলুন্ঠিত হয়েছে জাতীয় পতাকাও। 

অভয়া কাণ্ডে মূল দোষী শাস্তি পায় নি বলে বিশ্বাস করেন রাজ্যের অগণিত মানুষ। তাই প্রকৃত  দোষীকে শাস্তি দেওয়ার এবং এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে নবান্ন অভিযান করেছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ, এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলে বিজেপি। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে যেভাবে সাধারণ মানুষকে আজ পুলিশের হাতেই আক্রান্ত হতে হল, যেভাবে অভয়ার বাবা মাকে হেনস্থা হতে হল, তাতে বিচলিত পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে অভয়ার বাবা মা আটকে পড়েন। তাঁরা পুলিশকে বার বার করজোড়ে অনুরোধ করেন যে তাঁরা নিরস্ত্র, শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদেরকে নবান্নে যেতে দেওয়া হোক।  কিন্তু তাঁদের প্রার্থনায় কর্ণপাত করেন নি পুলিশ আধিকারিকরা। 


Loading

Leave a Comment