বিরলতম প্রজাতির এই প্রাণীর অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হল এই রাজ্যে

আজ খবর (বাংলা) [রাজ্য], কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ২৬/০৮/২০২৫ : ভারতের প্রাণী সর্বেক্ষণ সংস্থা (ZSI)-র বিজ্ঞানীরা পশ্চিমবঙ্গে কোলেম্বোলার দুটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছে। কোলেম্বোলা হল, মাটিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র সন্ধিপদী প্রাণী, যেগুলি মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গের জীববৈচিত্র্যকে আরও গভীরভাবে বোঝার পথ প্রশস্ত করেছে।
নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতিদুটির নাম রাখা হয়েছে Salina aurantiamaculata এবং Salina pseudomontana। প্রথমটির নামকরণ করা হয়েছে এর উজ্জ্বল কমলা রঙের দাগের জন্য, আর দ্বিতীয়টির নাম এসেছে Salina montana প্রজাতির সঙ্গে এর শারীরিক সাদৃশ্যের কারণে।
এই আবিষ্কারটি ZSI-এর অ্যাপটেরিগোটা (Apterygota) শাখার গবেষক দল করেছেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন ডঃ গুরুপদ মণ্ডল। এই দলে এছাড়াও ছিলেন শ্রীমতী পৃথা মণ্ডল এবং ডঃ সুরজিৎ কর। গবেষণাটি ১৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিন্যাস সংক্রান্ত সাময়িক পত্রিকা Zootaxa-তে প্রকাশিত হয়েছে।

ZSI-এর নির্দেশক ডঃ ধৃতি ব্যানার্জি গবেষক দলের প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করে কোলেম্বোলার পরিবেশগত গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, “কোলেম্বোলা মাটির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরা উপরিভাগের মাটির গঠন, পুষ্টি উপাদানের পুনর্ব্যবহার এবং জৈব পদার্থের পচন প্রক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।” তিনি আরও বলেছেন, “এদের ভূমিকা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়, কিন্তু পরিবেশগত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে তাদের গুরুত্ব অপরিহার্য।”
নতুন প্রজাতিদুটিকে স্বতন্ত্র করে তোলে এদের শরীরের চেটোট্যাক্সি বা লোমের বিন্যাস, ভিন্নধর্মী দেহবর্ণ এবং ফারকুলার (পেটের একটি কাঁটাযুক্ত অঙ্গ) গঠন। এতে রয়েছে একটি চতুষ্কোণ মুক্রো এবং শীর্ষভাগে দন্তাকৃতি উপাঙ্গ। প্রজাতিদুটি যৌগিক চোখযুক্ত, এবং এদের দেহে কোনো আঁশ নেই। উভয় প্রজাতিই সর্বব্যাপী বিস্তৃত celebensis গোষ্ঠীর অন্তর্গত।
ডঃ গুরুপদ মণ্ডলের মতে, এই আবিষ্কারটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ, এর ফলে ভারতে Salina গণের প্রজাতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭-এ। ভারতে সর্বশেষ Salina প্রজাতি নথিভুক্ত হয়েছিল ১৯৭৯ সালে—ফলে দীর্ঘ বিরতির পর এই আবিষ্কার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, “এই গবেষণা স্পষ্ট করে তোলে যে, এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলির বৈচিত্র্য এবং মাটির বাস্তুতন্ত্রে এদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অনুধাবনের জন্য ধারাবাহিক গবেষণা অপরিহার্য।”