
আজ খবর (বাংলা) [রাজ্য], কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ২১/০৫/২০২৫ : মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয় এবং অনুপস্থিত, এই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির।
কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনা ঘটেছিল, সেই ঘটনার পিছনে প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করতে কলকাতা হাইকোর্ট একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গড়ে দিয়েছিল। সেই কমিটি হাইকোর্টে তাদের রিপোর্ট জমা করেছে। সেই রিপোর্টে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
ঐ রিপোর্ট বলছে, ‘মুর্শিদাবাদে সেদিনের সেই হিংসার ঘটনার পিছনে ছিল স্থানীয় এক কাউন্সিলরের উস্কানি। সেদিনের হিংসায় মোট ১১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এলাকার মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে মালদহে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু পুলিশের চাপে তাদেরকে ফিরে আসতে হয়েছিল বেতবনা গ্রামে। অথচ যখন হিংসার ঘটনা ঘটেছিল সেই সময় পুলিশ ছিল একেবারেই নিষ্ক্রিয় এবং অনুপস্থিত। এলাকার মানুষ সেখানে চান যাতে নিরাপত্তার স্বার্থে বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনো ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।’
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, গ্রামে হিংসার দিন অর্থাৎ শুক্রবার বিকেল ৪টের সময় এবং শনিবার বিকেল ৪টের সময় পুলিশকে ফোন করে ডাকার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ ফোন তোলেনি। গ্রামবাসীদের ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল , দুষ্কৃতীরা শাসিয়ে গিয়েছে যে বিএসএফ তাদের কতক্ষন রক্ষা করবে ? রিপোর্টেও বলা হয়েছে যে ঐ এলাকায় দুষ্কৃতীরা জলের লাইনও কেটে দিয়ে গিয়ে ছিল, যাতে বাড়িতে আগুন লাগালেও জল দিয়ে তা নেভানো না যায়। দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে সব জামাকাপড় কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল, যাতে মহিলাদের গায়ে কোনো কাপড় না থাকে।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধুলিয়ানে মুদিখানার দোকান, হার্ডওয়ারের দোকান, ইলেক্ট্রিকের দোকান, কাপড়ের দোকান এবং যে সব দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায় সেইসব দোকানগুলিকে ভেঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছিল। প্রথম আক্রমণটি করা হয়েছিল ১১ই এপ্রিল ধুলিয়ানে দুপুর আড়াইটে নাগাদ। সেদিন ধুলিয়ানের একটি শপিং ম্যলে ভাংচুর চালানো হয়, সমস্ত জিনিসপত্র লুঠ হয়ে যায় এবং ম্যলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়.।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতীরা দাস পরিবারের বাড়ির প্রধান দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তারপর প্রথমে চন্দন দাস (৪০) এবং তারপরেই তার বাবা হরগোবিন্দ দাসকে(৭২) টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে। তাদেরকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাদের কুড়ুল জাতীয় ধারালো জিনিস দিয়ে ক্রমাগত কুপিয়ে যাওয়া হয়। যতক্ষণ না তাদের মৃত্যু হচ্ছে ততক্ষন একজন দাঁড়িয়ে থাকে ঘটনাস্থলে।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন যোগিন্দর সিং, রেজিস্ট্রার (আইন) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সত্য অর্ণব ঘোষাল, সদস্য সম্পাদক, ওয়েস্ট বেঙ্গল লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি এবং সুগত চক্রবর্তী ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিসের রেজিস্ট্রার। এঁদেরকে নিয়েই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গড়ে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।